আজকাল পশ্চিমা বিশ্বের মতই আমাদের দেশেও নানাবিধ অশ্লিলতা ও চরিত্রহীনতা শিমা অতিক্রম করেছে । পশ্চিমা মিডিয়া ও পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত পার্শবর্তি দেশ গুলো মিডিয়ার (স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল,ইন্টারনেট) মাধ্যমে ব্যাপক সাংকৃতিক আগ্রাসন চালাচ্ছে । এর প্রভাব আমাদের দেশের মিড়িয়াতেও পড়েছে । আমাদের দেশের মিডিয়া (টিভি চ্যানেল) গুলোও এখন বিজাতিও ধাচে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে । নাচ-গান,সুন্দরী প্রতিযোগি,অবৈধ প্রেম-পরকিয়া ও যৌন শূড়শূড়ি সম্বলীত নাটক -সিনেমা ও বিজাতীয় রূস্মো-রেওয়াজ সম্প্রচারের মাধ্যমে শিশু-কিশোর,যুবক-যুবতি,বৌ-ঝি এমনকি বয়স্ক মানুষের মনে ধর্ম বিমূখতা ও চরম অশ্লিলতা,শিরকি,কূফরি__ ধ্যান-ধারনা ঢেলে দেওয়া হচ্ছে __________

যার বাস্তব প্রতিফলন আমরা রাস্তা-ঘাটে বের হলে দেখতে পাই । জন্তু-জানোয়ারের মত প্রকাশ্যে দিনের বেলায় যুবক-যুবতীদের অবাধ ও বাধভাঙা মেলা-মেশা এখন সবখানে দেখা যায় । হিন্দি আর কলিকাতার পরকিয়া আর বিকৃত যৌনাচার সম্বলীত নাটোক-সিরিয়াল দেখে এদেশের বৌ-ঝি’রাও যারপনাই অনুপ্রনিত ও হতবিহম্বল হয়ে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ছে । যুবকদের চরিত্র ধ্বংস করে ইভটিজিং,ধর্ষন আর লিভ2গেদার,সমকামীতার মত জঘন্য ও নোংরা পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে ।

যাই হোক এবার মূল বিষয়ে আসা যাক _________________

বর্তমানে বিবাহ বহির্ভূত প্রেম-ভালবাসা ও অবৈধ যৌনাচার ক্যান্সারের মতই গোটা জাতীকে গ্রাস করতে বসেছে । আজকাল Boyfriend বা Girlfriend না থাকলে তাকে Back Dated,সেকেলে,বলে তিরষ্কার করা হয় । Boyfriend বা Girlfriend যেন এক Fashion এ পরিনত হয়েছে । লিটনের Flat এ বা প্রেমিকের মেস এখন অবিবাহীত বেদীন নষ্টা যুবতিদের কামলিলা কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে l ছেলে বন্ধু বা মেয়ে বন্ধুকে করা এখন গর্বের সাথে বলে বেনো হচ্ছে । এক বা একাধিক BF বা GF না থাকলে আজকাল নিজেকে Smart ও Modern হিসাবে উপস্থাপন করা যায় না । অপকর্মের পর অবৈধ গর্ভ ধারন ও অকাম-কুকাম ধামা চাপা দিতে শিশু হত্যা এখন অহরহ ঘটছে । ব্যাঙের ছাতার মত কিছু গজিয়ে ওঠা ক্লিনিক এসব গর্ভপাতের আঙ্জাম দিয়ে কোটি-কোটি টাকা কামাই করে চলেছে ।

পারিবারীক ভাবে ইদানিং যুবক-যুবতিদের এসকল অবৈধ কাজের সিকৃতি দেওয়া হয় । আজ-কালকার বাবা-মা বলেন ছেলে পুলে মানুষ একটা-দুটা মেয়ে বন্ধু বা ছেলে বন্ধু থাকতেই পারে । এখন তো এসব করারই বয়স । ওদের বয়সে আমরাও কত কিছু করেছি । আর একটু বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে সম্তান আরো দায়িত্বশীল ও বাস্তববাদী হবে । নিজের জন্য উপযুক্ত জীবন সঙ্গি যাচাই বাছাই করে নিজেই খুজে নিবে ____ !!

ধিক শত ধিক এমন বাবা-মা ও পরিবারকে এমন সমাজকে_যারা তাদের সন্তানদের অশ্লিতা আর চরিত্রহীনতার আনন্দে আত্বহারা । তাদের অপকর্ম আর ধর্ম বিমূক্ষতাকে Support করে আধুনিক সাজার চেষ্টা করে বেড়ায় ____

“যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্য ইহকাল ও পরকালে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।” [সুরা আন-নুর, আয়াত ১৯]

এখন দেখি ইসলাম এ বিষয়ে কি বলে _______

”রসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের কারো মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে দেয়া ঐ মহিলাকে স্পর্শ করা থেকে অনেক ভাল, যে তার জন্য হালাল নয়।” [ত্বাবারানী ২০/২১২, ছহীহুল জামে হাদীছ নং-৪৯২১]

“স্বাধীনভাবে লালসা পূরণ কিংবা গোপনে লুকিয়ে প্রেমলীলা করবে না” [সূরা আল মায়িদা: ৫]

এরপর সূরা নূর এর ৩০ নং আয়াতে পুরুষদের চোখ নীচু রাখতে এবং লজ্জা স্থান হিফাজত করতে বলা হয়েছে। ৩১ নং আয়াতে নারীদেরও একই কথা বলা হয়েছে, পর্দা করার কথা বলা হয়েছে আর নারীরা কাদের সাথে সাক্ষাত করতে পারবে তাদের একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে। সূরা আহযাবের ৫৯ নং আয়াতে পর্দা করার নির্দেশ আরো পরিস্কার ভাষায় বলা হয়েছে। যেখানে দৃষ্টি নীচু ও সংযত রাখা, লজ্জা স্থান হিফাজত করার কথা এবং পর্দা করার কথা বলা হয়েছে আর সূরা মায়িদাতে গোপন প্রেমলীলাকে নিষেধ করা হয়েছে সেখানে বিবাহ পূর্ব প্রেম বৈধ হতে পারে কি করে? এটা হারাম। জিনা তথা অবৈধ শারীরীক সম্পর্ক হারাম। [সূরা ইসরা আয়াতঃ ৩২],[সূরা ফুরকানঃ ৬৮]

জিনার নিকট যাওয়াই নিষেধ অর্থাৎ যে সকল জিনিস জিনার নিকটবর্তী করে দেয় তার কাছে যাওয়াই নিষেধ।

কেউ মজা মারার জন্যে প্রেম করে, কেউ শারীরিক চাহীদা মেটাতে প্রেম করে, আবার কেউ বিয়ে করবে এজন্যে প্রেম করে ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে এই প্রেম জীবনের বড় অশান্তি ও ক্ষতির কারন হয়ে যায়, যেমন, অবৈধ গর্ভপাত, মাদকাশক্তি, অনেক ক্ষেত্রে আত্তহত্যা ইত্যাদির দিকে আমাদের কে নিয়ে যায় এই প্রেম নামক পাপাচারটি ।

হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “লালসার দৃষ্টি চোখের ব্যভিচার, লালসার বাক্যালাপ জিহবার ব্যভিচার, কামভাবে স্পর্শ করা হাতের ব্যভিচার, এ উদ্দেশ্যে হেঁটে যাওয়া পায়ের ব্যভিচার, অশ্লীল কথাবার্তা শুনা কানের ব্যভিচার, কামনা বাসনা মনের ব্যভিচার, গুপ্তাঙ্গ-যা বাস্তবে সূপদান করে কিংবা দমন করে।” [বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযি]

বিবাহ পূর্ব সম্পর্ক কোন ভাবেই বৈধ নয়, হোক তা পর্দার আড়াল থেকে।

”ইবনে আব্বাস কর্তৃক বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন পুরুষেরই কোন নারীর সাথে একাকী অবস্থান করা যাবে না।” [বুখারী ও মুসলিম]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, কোন পুরুষই কোন নারীর সাথে একাকী থাকে না বরং সেখানে তৃতীয় একজন অবস্থান করে আর সে হচ্ছে শয়তান। [সহীহ, তিরমিযী]

অর্থাৎ বিবাহ পূর্ব সাক্ষাৎ, কথা বলা(আবশ্যিক প্রয়োজন ব্যতীত) জায়েজ নেই। কাজেই কোন প্রকার সম্পর্ক গড়ে উঠার প্রশ্নই উঠে না । আপনার স্ত্রী ছাড়া , যেকোন নারীর সাথে যেকোনো ধরনের “প্রেম” জাতীয় সম্পর্ক ইসলামে সম্পূর্ন নিষেধ । হোক সেটা “শারীরিক” বা “মানসিক” ।

আপনি কোন মেয়ের সম্পর্কে জানতে পারলেন সে ভাল, তাকওয়া সম্পন্ন এবং দেখতেও ভাল সে ক্ষেত্রে আপনি তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিতে পারেন এবং বিবাহের পূর্বে মাহরাম ব্যক্তির উপস্থিতিতে সেই মেয়ের সাথে কথা এবং তাকে দেখে নিতে পারেন। এই একই নিয়ম নারীদের বেলায়ও প্রযোজ্য ।

যৌন স্পৃহা প্রকৃতিজাত । ইসলাম এটিকে ধর্মের আওতায় এনেছে; পবিত্রতা ও বিশ্বাসের আওতায় এনেছে। বিবাহের মাধ্যমে এ স্পৃহাকে শুধু সুস্থতা দেয় নি, বরং এটাকে ঈমানের এক অংশ করে দিয়েছে। বিবাহে ঈমানের পূর্ণতা প্রকাশ পাওয়ার কথা বলেছে । ধর্ম কাজে বিবাহিত ও অবিবাহিতের মধ্যে পার্থক্য সূচিত করেছে; বিবাহিতের ইবাদতে সওয়াবের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে; যৌনস্পৃহা বিবাহে নিবারণে সওয়াব সংযোগ করেছে; ইবাদততুল্য মর্যাদা দিয়েছে । সুস্থ সামাজিকতায় বিবাহকে এক মৌলিক সমাধান হিসেবে দেখেছে। তারপর জিনা-ব্যাভিচারকে শুধু হারাম করে নাই; বলেছে এর ‘ধারে পাশে’ না যেতে। এটাই হচ্ছে আমাদের ধর্ম ।

– মোঃ রেজওয়ানূর রহমান

Source: www.ummaland.com