ফড়িং মিডিয়া: হাতের মুঠোয় সকল নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) নাগরিকদের জন্য ‘নগর’ নামে একটি ডিজিটাল অ্যাপ চালু করেছে। ডিএনসিসির জন্য বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির (বিইউ) আরবান ল্যাব নাগরিক সেবার তথ্যভান্ডার সমৃদ্ধ এ অ্যাপটি তৈরি করেছে। এটি সেবার পাশাপাশি হবে নিরাপত্তার হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হবে।

বুধবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই অ্যাপের উদ্বোধনকালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই অ্যাপ নগরীর মানুষের জন্য নাগরিক সেবার একটি অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে।

এই ডিজিটাল অ্যাপ দেশের অন্যান্য পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে চালু করা হলে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি জীবনকে সহজ ও সম্ভাবনাময় করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে ঘরে বসে দেশের মানুষ নাগরিক সেবাগুলো পাচ্ছে, বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বোর্ড ট্রাস্টিজ চেয়ারম্যান জামিল আজহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি’র মেয়র আনিসুল হক বলেন, দায়িত্ব নেয়ার সময় নগরবাসীকে একটি নিরাপদ, সবুজ, সুশৃঙ্খল, আধুনিক ও স্মার্ট নগরী হিসেবে উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। এই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দিনদিন ঢাকা শহর বদলে যাচ্ছে। আগামী ৪ বছরে সত্যিকার অর্থে একটি ভিন্ন শহর হিসেবে ঢাকাকে নগরবাসীর সামনে উপস্থাপন করা হবে।

DNCCঅনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশের সাড়ে ৪ নহাজার ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে গ্রামে-গঞ্জে প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। এই নগর অ্যাপটি পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশকে চুড়ান্ত স্বীকৃতি দেবে।

তিনি বলেন, এই অ্যাপটি ব্যবহার করে একজন নাগরিক যাতে তার দৈনন্দিন সকল কাজ ঘরে বসে সম্পন্ন করতে পারে এজন্য সরকারের আইসিটি ডিভিশন থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আব্দুন নূর তুষার জানান, এই অ্যাপের মাধ্যমে এলাকার রাস্তা, সড়কবাতি, বর্জ্য, ড্রেনেজ, মশক, অবৈধ দখল, ঘুষ ও দূনীর্তি এ সাতটি অভিযোগ বা মতামত সরাসরি সিটি কর্পোরেশনে পাঠানো যাবে। মোবাইলে ছবি উঠানোর পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে যাবে। সিটি কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন জোনের কাছে রক্ষিত ড্যাশবোর্ডের প্রতিটি অভিযোগ ও মতামত প্রতিফলিত হবে। অভিযোগের বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন যে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করবে সেটিও ড্যাশবোর্ডে দৃষ্টিগোচর হবে। পরে অভিযোগকারীকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমাধানের বিষয়টি জানানো হবে।

প্রিয়জন কোন বিপদে পড়লে মাত্র ৩ সেকেন্ডে অ্যাপের ‘এসওএস’ আইকনে চেপে ধরলে পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে স্যাটেলাইটের সহায়তায় বাবা, মা, আত্মীয় ও নিকটস্থ পুলিশের কাছে বিপদ সংকেত বেজে উঠবে। ভিকটিমের ছবি, অবস্থান ও কণ্ঠ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পৌঁছে যাবে। এছাড়া ২ মিনিট পরপর বিপদ সংকেত বাজতে থাকবে। অ্যাপটির ট্র্যাকিং সুবিধা ব্যবহার করে প্রিয়জনের গতিবিধি ও অবস্থান জানা যাবে।

বর্তমান সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে ডিএনসিসি’র নগর অ্যাপের এ ফিচারটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয়। পাশাপাশি এতে নিকটস্থ হাসপাতাল, পুলিশ স্টেশন, বাসস্টপ, ফায়ার সার্ভিস, এটিএম বুথসহ জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা থাকবে বলে তিনি জানান।

গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড ও ইন্সটল করে রেজিস্ট্রেশন করার মাধ্যমে যেকোন নাগরিক পৃথিবীর যেকোন স্থানে বসে এটি ব্যবহার করতে পারবেন। অবশ্য এজন্য অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে।