ফড়িং মিডিয়া – অনলাইন ডেস্ক: অন্তঃসত্ত্বা এক তরুণীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে যশোরের অভয়নগর থানা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন ঘটনার শিকার তরুণী।

সংবাদ সম্মেলনে ওই তরুণী দাবি করেন, তাঁর বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। চার বোনের মধ্যে তিনজনের বিয়ে হয়ে গেছে। মেয়েটি ও তাঁর মা একটি ঘর ভাড়া নিয়ে অভয়নগরে থাকেন। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। নানা বাধা পেরিয়ে চলতি বছর তিনি ৪ দশমিক ৮০ জিপিএ নিয়ে এসএসসি পাস করেছেন।

মাঝে কয়েক বছর পড়ালেখা বন্ধ ছিল। যশোরের অভয়নগরের জনি সরদারের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। অভয়নগরে হোটেল আল সেলিমের মালিক জনি। প্রেমের সম্পর্কের সুবাদে ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর জনি তাঁকে হোটেলে ডেকে নিয়ে মৌলভির মাধ্যমে কলেমা পড়িয়ে ও কয়েকটি স্ট্যাম্পে সই নিয়ে বলেন যে তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। এরপর থেকে তাঁরা দাম্পত্য সম্পর্ক রক্ষা করতেন।

তরুণীটির অভিযোগ, চলতি বছর তিনি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর জনি তাঁকে গর্ভপাত করানোর জন্য চাপ দিতে থাকেন। গত ১০ জুন তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গর্ভপাত করানোর চেষ্টা করেন জনি। তিনি যখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন গত ৭ জুলাই মীমাংসার কথা বলে তাঁকে জনির হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে গর্ভপাত করানোর চেষ্টা হয়। পরে জনি, শেখ সাইফার, সুমন, আজিম মোল্যা ও রুবেল মোল্যা তাঁকে ধর্ষণ করেন। তিনি অভয়নগর থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। এরপর নানা চাপে মাকে নিয়ে তিনি প্রথমে যশোর ও পরে ঢাকায় চলে আসেন।

সংবাদ সম্মেলনে তরুণীর সঙ্গে তাঁর মা ও কয়েকজন তরুণ উপস্থিত ছিলেন। ওই তরুণেরা নিজেদের ঘটনার শিকার তরুণীর প্রতিবেশী ও এলাকার লোক বলে পরিচয় দেন। তাঁদের অভিযোগ, তরুণীকে সাহায্য করতে গিয়ে এলাকায় টিকতে না পেরে তারা ঢাকায় এসেছেন। ধর্ষকেরা সবাই সরকারদলীয় নেতাদের কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত।

মুদি ব্যবসায়ী পরিচয় দেওয়া তরুণদের একজন বলেন, হোটেল আল সেলিমের পাশেই তাঁর দোকান। তিনি মাঝে মধ্যেই ওই হোটেলের নিচতলায় যান টয়লেট ব্যবহার করতে। সেদিন গিয়ে ওপর থেকে কান্নার শব্দ পান। এরপর দোতলার একটি কক্ষের সামনে গিয়ে কান্নার জোর শব্দ শুনে কৌতুহলবশত দরজা ধরতেই সেটি হালকা ফাঁকা হয়ে যায়। ভেতরে তিনি এক তরুণীকে দেখেন। পরে জনি তাঁকে তাড়িয়ে দেন।

পরে মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বের হলে তিনি পুরো ঘটনা জানতে পারেন। কিন্তু ঘটনা জেনে মেয়েটির পাশে দাঁড়ানোর সাহস হয়নি তাঁর। তবে মেয়েটিকে তিনি থানায় যেতে বলেছিলেন। মেয়েটি থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে মেয়েটিকে মামলা করতে সাহায্য করতে গেলে অভিযুক্ত ধর্ষণকারীরা তাঁর দোকানটাই বন্ধ করে দেন। তিনিও পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন।

অভিযোগের ব্যাপারে জনি সরদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে গত ২৮ জুলাই যশোরেও সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন ওই তরুণী। তখন জনি সরদারের সঙ্গে প্রথম আলোর যশোর অফিস যোগাযোগ করেছিল। তখন জনি বলেছিলেন, ওই তরুণীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়নি। মেয়েটির গর্ভের সন্তানের পিতার দায়ও তিনি এড়িয়ে গেছেন। মেয়েটিকে ডেকে নিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেছিলেন।

অভয়নগর থানা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ওই তরুণীর বিরুদ্ধে তিনি মানহানির মামলা করেছেন।

অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ‘কয়েক দিন আগে যশোর থেকে সাংবাদিকেরা ফোন করেছিলেন মেয়েটির অভিযোগের বিষয়ে জানতে। তাদের কাছেই মেয়েটির নাম প্রথম শুনি। আবার আজকে আপনার কাছে শুনলাম। আমি যশোরের সাংবাদিকদের বলেছিলাম মেয়েটিকে থানায় পাঠিয়ে দিতে। কিন্তু এরপর মেয়েটি আর আসেনি।’

থানা-পুলিশ তরুণীর মামলা না নিলে তিনি যশোর আদালতে দুটি মামলা করেন। ব্যাভিচারের অভিযোগে প্রথমে তিনি জনি সরদারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে জনি, শেখ সাইফার, সুমন, আজিম মোল্যা ও রুবেল মোল্যাকে আসামি করে আদালতে আরেকটি মামলা করেন ওই তরুণী।