ফড়িং মিডিয়া – অনলাইন ডেস্ক: তরুণ প্রজন্মের কাছে খুব প্রিয় অ্যাপ ‘স্ন্যাপচ্যাট’। এখানে চ্যাট করলে নিজে থেকে মুছে যায়, কিছু শেয়ার করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হারিয়ে যায়। কে, কতটা দেখছে তা নিয়ন্ত্রণও করা যায়। তাই তন্বীরা নিশ্চিন্তে কাপড়ে খোলেন।

হালের পশ্চিমা কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা একটা দিকে বেশ খেয়াল রাখেন। নিজেকে যতটা সম্ভব ‘সেক্সি’ একটা ইমেজ গড়ার চেষ্টা থাকে তাদের মধ্যে। বিশেষ করে তাদের অনলাইন প্রোফাইলগুলোতে যেসব ছবি তারা শেয়ার করেন, তাতে অধিকাংশ সময়ই থাকে নিজেকে যতটা সম্ভব আকর্ষণীয় করে উপস্থাপনের এক চেষ্টা।

নিজের যৌন আবেদনময়ী, খোলামেলা ছবি প্রকাশের ক্ষেত্রে হালের প্রজন্মের অন্যতম পছন্দ ‘স্ন্যাপচ্যাট’। ওটা নাকি বেশ নিরাপদ। কতটা নিরাপদ সেটা বুঝতে আমি নিজেই খানিকটা ঘাটাঘাটি করলাম। অল্পতেই বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় কন্টেন্ট শেয়ারের ওয়েবসাইট রেডিটে এক গ্রুপের সন্ধান পেলাম। সেই গ্রুপ তরুণ, তরুণীদের বিশেষ করে তরুণীদের অর্ধনগ্ন, পুরো নগ্ন ছবি আর ছোট ছোট ভিডিওতে সয়লাব।

সেই গ্রুপে খানিকটা বিচরণ করে বুঝলাম, স্ন্যাপচ্যাটে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করা বিভিন্ন কন্টেন্ট কোনো না কোনভাবে বেহাত হয়ে পৌঁছে যায় রেডিটের সেই গ্রুপের মতো আরো অনেক অনলাইন ঠিকানায়। এ সব ছবি, ভিডিওতে থাকা মানুষরা নিজেদের ইচ্ছাতেই সেগুলো পোস্ট করেন স্ন্যাপচটে। কিন্তু নির্দিষ্ট বন্ধুর গণ্ডির মধ্যকার কেউ সেগুলো ছড়িয়ে দেন ইন্টারনেটের অনিয়ন্ত্রিত দুনিয়ায়।

পশ্চিমা সমাজে একজন তরুণীর খোলামেলা পোশাক কিংবা অর্ধনগ্ন বা নগ্ন ছবি প্রকাশ এমন বড় কোনো ব্যাপার নয়। কিন্তু আমাদের বাঙালি সমাজে বিষয়টি এখনো সেরকম পর্যায়ে পৌঁছায়নি। ফলে আমাদের রক্ষণশীল সমাজে কোন তরুণীর সামান্য খোলামেলা ছবিই সমাজে তাকে নানারকম নেতিবাচক উপাধিতে ভূষিত করতে পারে।

জ্যাকুলিন মিথিলার কথাই ধরুন। ফেসবুক লাইভে বেশ খানিকটা খোলামেলা অবস্থায় উপস্থিত হতেন তিনি। নিজেকে বাংলার সানি লিওনি দাবি করে লাইভ ভিডিওতে বুকের কাপড় সরিয়ে নিয়েছেন তিনি। দৃশ্যত নগ্ন হতেও দেখা গেছে তাঁকে। তাঁর এসব ভিডিও লাখ লাখবার দেখা হয়েছে ফেসবুকে, ইউটিউবে।

মিথিলা কিছুদিন আগে আত্মহত্যা করেছেন। সংসার টেকাতে পারেননি তিনি। আমাদের সমাজ অর্ধনগ্ন মিথিলাকে দেখে নিজের গোপন বাসনা মেটাতে পারলেও প্রকাশ্যে তাকে মেনে নিতে পারেনি। একজন বাঙালি স্বামীর পক্ষে হয়ত নিজের স্ত্রীকে ফেসবুক, ইউটিউবে অর্ধনগ্ন দেখা সম্ভব হয়নি। যদিও মিথিলা নাকি লাখ টাকা খরচ করে শাশুড়ির চিকিৎসা করিয়েছিলেন। সেই টাকা তিনি রোজগার করেছিলেন নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের খ্যাতিকে কাজে লাগিয়েই। নিজের বাবামায়ের সংসারের খরচও নাকি যোগাতেন তিনি। সেই মিথিলা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে আত্মহত্যা করলেও কেউ তাঁকে বাঁচাতে যায়নি।

মিথিলার মতো আরো কয়েক তরুণী এখন ফেসবুক লাইভে বেশ আলোচিত চরিত্র। নিজেদের যৌনজীবন, পুরুষের যৌনতা নিয়ে খোঁচা দেয়া নানা মন্তব্য তারা করছেন লাইভে। সেগুলো রেকর্ড হয়। ছড়িয়ে যায় ইন্টারনেটে৷ কেউ কেউ আবার নিজের প্রোফাইল থেকে মুছে ফেলেন সেগুলো। কিন্তু থেকে যায় ইউটিউব-এ বা এমএসএস-এ।

একজন মানুষের অনলাইন জীবন কী হবে, সেটা নির্ধারণের স্বাধীনতা তাঁর অবশ্যই আছে। কিন্তু তিনি কোথায় অবস্থান করছেন সেটাও একটা ফ্যাক্টর। পশ্চিমা সমাজে যা চলে আমাদের বাঙালি সমাজে তা চলে না। তাই বাঙালি তরুণীদের বলছি, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাটে খোলামেলা ছবি দেয়ার আগে আরেকবার ভাবো। একবার কিছু ইন্টারনেটে ছড়িয়ে গেলে তা আর ফেরানো যাবে না। আজ যা এক্সাইটিং মনে হচ্ছে, কাল তা নাও হতে পারে।

সূত্র: ডয়চে ভেলে