ফড়িং মিডিয়া – অনলাইন ডেস্ক: অনেক কম সময়ে অনেক বেশি উপার্জন। সঙ্গে রঙিন জীবনের হাতছানি। তার উপর, জীবন-যৌবনকে উপভোগের ঢের সুযোগও রয়েছে। এমনই নানা প্রলোভন৷আর, যে প্রলোভন আবার এড়ানোরও নয় অনেকের কাছে৷যার জেরেই, প্রবেশ ঘটছে অন্য এক পেশায়৷এবং, ওই পেশার প্রতি ক্রমে আরও বেশি তৈরি হচ্ছে আগ্রহ।
তবে, এমন অনেকেও রয়েছেন, যাঁদের ক্ষেত্রে ওই পেশায় আবার উপার্জনটাই অন্যতম কারণ হিসেবেও দেখা যাচ্ছে। আর, এ সবেরই কারণে, কলকাতা মায় এ বঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তেও এখন অন্য ওই পেশার কদর দিনকে দিন আরও বেড়ে চলেছে। কে নেই, যিনি ওই পেশার সঙ্গে যুক্ত নন? কলেজছাত্র থেকে শুরু করে বেকার যুবক মায় ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী থেকে শুরু করে কর্পোরেট কালচারে অভ্যস্ত পেশাদার৷অন্য ওই পেশার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন এমনই সকলে। আর এ ভাবেই, কল্লোলিনী এই তিলোত্তমা থেকে শুরু করে আশপাশের শহর তো বটেই, অন্য ওই পেশা এখন ছড়িয়ে পড়েছে এ রাজ্যের বিভিন্ন ছোট-বড় শহরেও। কিন্তু, অন্য ওই পেশায় যোগদানের জন্য কেবলমাত্র পুরুষেরই অগ্রাধিকার রয়েছে। এবং, ওই পেশাদারদের পোশাকি নাম জিগোলো৷সব মিলিয়ে বাংলাবাজার জুড়ে এখন জিগোলোদেরই রমরমা।
রমরমা হবে না-ই বা কেন! কারণ, ইতিমধ্যেই চালু হয়ে গিয়েছে, কলকাতায় এখন দশটা-পাঁচটার নতুন ডিউটি! কাজেই, অন্য ওই পেশার প্রতি আগ্রহ আরও বেশি করে তৈরি হওয়া ছাড়া আর কী-ই বা হতে পারে! কারণ, ওই পেশার লোভনীয় হাতছানিও যে কম নয়! কী রকম সেই সব লোভনীয় নমুনা? যেমন, আপনার জীবনকে আরও রঙিন ও সৌন্দর্যময় করতে ২৫ থেকে ৪০ বছরের সুন্দরী মহিলাদের সঙ্গে পার্টি, ভ্রমণ করুন। গাড়ির ব্যবস্থা রয়েছে৷ থাকা-খাওয়ার সুবিধা ও আয় করে প্রতিষ্ঠিত হন। কোথাও আবার নমুনা হিসেবে রয়েছে, হাইপ্রোফাইল নিঃসঙ্গ সুন্দরী মহিলাদের সঙ্গে বোল্ড রিলেশন করে আয়ের কথা৷শুধু তাই নয়। এই ধরনের আয়ের ক্ষেত্রে একশো শতাংশ গ্যারান্টি দেওয়ার কথাও রয়েছে। কারও মনে যাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ দেখা না দেয়, সেজন্য ওই সব নমুনার সঙ্গে দাবি করা হয় সরকারি রেজিস্ট্রেশনের কথাও। যে কারণেই দাবি করা হয়, ঠকবার ভয় নেই।
এই ধরনের নানা লোভনীয় নমুনার বিষয়ে সাধারণত সব থেকে বেশি বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় বিভিন্ন ভাষার সংবাদপত্রে। তবে, অন্য এই পেশায় যোগদানের জন্য মাধ্যম হিসেবে রয়েছে ইন্টারনেট তথা বিভিন্ন ধরনের সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটও।
সংবাদপত্রে সাধারণত ফ্রেন্ডশিপ ক্লাব নামে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। কোথাও আবার উল্লেখ থাকে এসকর্ট সার্ভিসের কথাও। আর, তাতে নমুনা হিসেবে থাকে, একশো শতাংশ সুন্দরী হাইপ্রোফাইল মহিলা মেম্বারশিপ ক্লাবের কথাও। নমুনা হিসেবে থাকে, পছন্দ ও ভাবনা আপনার। তবে, আয় করতে পারবেন ইচ্ছে মতো। এ রাজ্যের সব জেলা এবং মহকুমায়ও যে ওই অন্য পেশায় যোগদানের সুযোগ রয়েছে, উল্লেখ থাকে সেই বিষয়টিও। শুধু কি আর বাঙালি অথবা অবাঙালি কোনও মহিলার জন্য পরিষেবা দিতে হবে কোনও জিগোলোকে? মোটেও নয়। বিশ্বায়নের সৌজন্যে এখন এ বঙ্গে থেকেই বিদেশি কোনও মহিলার সঙ্গে বেড়ানো অথবা পার্টি করারও সুযোগ মিলছে। এবং, ওই বেড়ানোর সময় অথবা পার্টি শেষে বিদেশি ওই মহিলার সঙ্গে বোল্ড রিলেশনের মাধ্যমে উপার্জনের সুযোগও রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। ওই সব নমুনায় দাবি করা হয়, এই অন্য পেশার বিষয়টি গোপন রাখা হবে।
তবে, অন্য এই পেশার বিষয়ে কখনও আবার সংবাদপত্রে নেহাতই সাদামাটা বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়। সেখানে বোঝারও উপায় থাকে না, যে ওই ধরনের বিজ্ঞাপনে আসলে জিগোলো হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। যেমন, বিজ্ঞাপন দেওয়া হল, ওমুক জায়গায় কাজের জন্য প্রচুর ছেলে চায়৷ ফোন নম্বরও দেওয়া থাকে। তবে, ওই ফোন নম্বরে কথা বললে কিন্তু কোনও রাখঢাক না করেই জানিয়ে দেওয়া হয়, যে ওই কাজের বিষয়টি আসলে মহিলাদের যৌনসুখ দেওয়ার পরিষেবা। এ দিকে, পেশাদার হিসেবে যাঁরা জিগোলো হচ্ছেন, তাঁদের ডিউটি সাধারণত বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে নির্ধারিত হচ্ছে৷ তবে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার একজন জিগোলো নিজেই বেছে নিচ্ছেন, যে কোন মহিলাকে তিনি যৌনসুখের পরিষেবা দেবেন। কোনও এজেন্সির মাধ্যমে অন্য এই পেশায় যোগদান করতে হলে, প্রথমে নির্ধারিত অঙ্কের টাকা নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করতে হয়। জমা দেওয়া ওই টাকাকে এজেন্সির ভাষায় বলা হয় রেজিস্ট্রেশন ফি।
ওই ধরনের এক এজেন্সির তরফে এক ব্যক্তির দাবি, ‘রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দেওয়ার পর আপনাকে একটি আইডি নম্বর দেওয়া হবে। তারপরেই আপনাকে সার্ভিস দেওয়া হবে।’কোনও একজন জিগোলোর ক্ষেত্রে তাঁর একটি নামও প্রয়োজন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবশ্য ছদ্মনাম ব্যবহার করেন জিগোলোরা। দিন হোক অথবা রাত, যে কোনও সময়েই ডিউটি করতে হয় কোনও জিগোলোকে। তবে, যে সময়েই ডিউটি হোক না কেন, সাধারণত এই বিষয়টি ঠিক করেন গ্রাহক অর্থাৎ, সংশ্লিষ্ট মহিলাই। যে কারণে, কখনও যেমন দুপুর। কখনও আবার সন্ধে অথবা রাত। তেমনই, কখনও আবার সারারাতও ডিউটি করতে হতে পারে কোনও জিগোলোকে৷ এমনও হয়, জিগোলোকে সঙ্গে নিয়ে গ্রাহক আবার কোথাও বেড়াতে গেলেন কয়েকদিনের জন্য। সেক্ষেত্রে ওই ক’দিন ডিউটি করতে হয়।
অন্য এক এজন্সির তরফে এক ব্যক্তি বলেন, ‘এই ধরনের উপার্জনের জন্য আমাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এক হাজার ৫০ টাকা প্রথমে জমা দিতে হবে। তার পরই আপনাকে একটি আইডি নম্বর দিয়ে সার্ভিস দেওয়া হবে।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে আপনি নিতে পারলে সর্বাধিক চারটি সার্ভিস পাবেন। প্রতিটি সার্ভিসের জন্য ঘন্টা তিনেক সময় দিতে হবে৷’ কীভাবে হবে উপার্জন? অন্য আর এক এজেন্সির তরফে এক ব্যক্তি বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের প্রোফাইল থেকে পছন্দের জিগোলোকে বেছে নেবেন কোনও গ্রাহক৷সাধারণত গ্রাহকের পছন্দ মতো জায়গায় জিগোলোকে সার্ভিস দিতে হয়। ওই গ্রাহকের সন্তুষ্টির পর তিনি নগদ টাকা দেবেন জিগোলোকে৷ তার পর জিগোলোকে ওই টাকা থেকে এজেন্সির কমিশন মিটিয়ে দিতে হবে।’
যদিও, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যে রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দেওয়ার পরেও সার্ভিস দেয় না সংশ্লিষ্ট এজেন্সি। এ ভাবে আসলে টাকা লোপাট করা হয়। যে জন্য বিভিন্ন চক্রও রয়েছে৷ অথচ, এ ভাবে টাকা খোয়া যাওয়ার পরেও, সাধারণত পুলিশে কেউ অভিযোগও দায়ের করেন না। কারণ, সাধারণত এই বিষয়টি কেউ প্রকাশ্যে আনতে চান না৷ তা সত্ত্বেও, ক্রমে আরও বাড়ছে জিগোলোর সংখ্যা৷ সব মিলিয়ে, শুধুমাত্র কল্লোলিনী এই তিলোত্তমাই নয়। এই মহানগরীর অলি-গলি-রাজপথ ছাড়িয়ে জিগোলোর অবাধ গতি এখন গোটা বাংলাবাজারেই।
সূত্র: কলকাতা২৪