babyফড়িং মিডিয়া – স্বাস্থ্য ডেস্ক: শিশু কে সুস্থ, সবল ও উপযুক্ত করে গড়ে তোলা প্রতিটি মা-বাবার দায়িত্ব। এজন্য প্রয়োজন শিশুদের নিরাপদ পরিবেশে বড় করে তোলা। নিউমোনিয়ার সাথে পরিচিত নন এমন মানুষকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। বর্তমানে উন্নত চিকিত্সার সুবিধা থাকার পরও শুধু সচেতনতার অভাবেই নিউমোনিয়ায় প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় লাখ লাখ শিশু মারা যায়। বাংলাদেশেও এর সংখ্যা কম নয়।

বাংলাদেশের অবস্থান শিশু মৃত্যুতে ৫ম। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক সময় বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সের ১ লাখ ৪০ হাজার শিশু মারা যেতো। এখন তা অনেক কমে এসেছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৬০ লাখ শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার শিশুর মৃত্যুর হয়। অনেকেই হয়তো জানেন না নিউমোনিয়ার চিকিত্সা অতি সহজ এবং অল্প খরচে করা সম্ভব। একটু সচেতন হলেই নিউমোনিয়া যেমন প্রতিরোধ করা যায়, তেমনি সময়মত চিকিত্সা করালে অতি অল্প খরচে শিশুদের মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যায়।

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু গ্রামেই বেশি হয়। অশিক্ষার কারণে মা-বাবা শিশুদের নিউমোনিয়ার লক্ষণগুলো বুঝতে পারেন না। সংগত কারণেই শিশুর অকাল মৃত্যু ঘটে। মা-বাবা নিউমোনিয়ার সকল লক্ষণগুলো ভালোভাবে জানা থাকলে এ রোগে শিশু মৃত্যুর হার অনেক কমানো যেতো।

শিশুর সর্দি, কাশি, জ্বরের সাথে শ্বাসকষ্ট হলেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে মনে করার কারণ নেই। অন্য কোনো কারণেও শিশুর শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তবে শিশুর নিউমোনিয়া হলে শ্বাস গ্রহণের সময় বুক নিচের দিকে দেবে যায়। শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে বাঁশির মতো শব্দ হয়, খাবারের প্রতি অরুচি হওয়া ইত্যাদি।

এছাড়া শিশুর শ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়া অর্থাত্ ২ বছরের কম বয়সের শিশুর শ্বাস মিনিটে ৪০ বা এর বেশি, এক বছরের কম হলে ৫০ বা এর চেয়ে বেশি এমন কিছু লক্ষণ দেখা দিলে ধরে নেয়া যায় শিশুটি নিউমোনিয়া আক্রান্ত। এ সকল লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস অস্বাভাবিক হলে সাথে জ্বর থাকলেও চিকিেসর শরণাপন্ন হওয়া একান্ত প্রয়োজন।

যে কোন বয়সের শিশুর নিউমোনিয়া হতে পারে। নিউমোনিয়ার প্রধান কারণ হলো-ঠান্ডা, প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস। এর যে কোন একটির কারণেই শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে ৫ বছরের কম বয়সের শিশুরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত বেশি হয়। যে সকল শিশু অপুষ্ট হয়ে জন্ম নেয়, জন্মের সময় ওজন কম থাকে, মায়ের বুকের দুধ পায়নি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, টিকা সঠিক ভাবে নেওয়া হয়নি, অস্বাস্থ্যকর ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে বসবাসকারী শিশুরা নিউমোনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হতে পারে।

কিছু নিয়ম মেনে চললে সহজেই শিশুকে নিউমোনিয়ার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শিশুকে ৬ মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ এবং দুই বছর পর্যন্ত নিয়মিত মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ কমে যায়। শিশুর বয়স ছয় মাসের পর থেকে বাড়তি খাবার হিসেবে সবুজ ও হলুদ রঙের শাক-সবজি, ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদি ভালোভাবে সিদ্ধ করে খাওয়াতে হবে এবং অবশ্যই সময় মতো সবগুলো টিকা দিতে হবে।

এসকল টিকার মাধ্যমে শিশুকে হুপিং কাশি, যক্ষ্মা, হামসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন কঠিন রোগ থেকে মুক্ত রাখা যায়। শিশুদের বাসস্থান ধুলা-বালিমুক্ত সহজেই আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে এমন হতে হবে। শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাই তারা সহজেই অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে শীতের সময় শিশুদের নিউমোনিয়া প্রতিরোধে একটু বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।